বিস্তারিত
  • বিশ্বনাথে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হতে ২ কাউন্সিলরের দ্বন্দ চরমে : চমক দেখাতে পারেন মেয়র মুহিব


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 30 June, 2024, 4:58 PM || বিশ্বনাথ


    নিজস্ব প্রতিবেদক:: সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এক সরকারী প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। এই সাময়িক কালটা কত সপ্তাহের কিংবা কত দিনের সংশ্লিষ্ট কেউ তা বলতে পারেননি। একই দিন একই মন্ত্রণালয় আরেক প্রজ্ঞাপনে প্যানেল মেয়র-১ কে প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে পৌরসভার মেয়রের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। এরপর থেকে বিশ্বনাথ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দাবি করছেন দুই কাউন্সিলর। যথাক্রমে ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী ও ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়া। ক্ষমতার মসনদে বসতে দুজনের দ্বন্দ এখন চরমে। অপর দিকে মুহিবুর রহমান মেয়রের পদ পুনরুদ্ধারে উচ্চ আদালতে আজ দিনভর দৌড়ঝাপ করেছেন।
    ২০২২ সালের ২রা নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ পৌরসভার ১ম নির্বাচন। এতে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র হয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্ঠি করেন। পাশাপাশি ৮টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মধ্যে মোট ৮টি পদে নির্বাচিত হন সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যগণ। এর কারণে তাদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও ছিল বেশী। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই বিশ্বনাথের স্থানীয় রাজনীতির সেই পুরোনো সংস্কৃতি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। লেগে যায় শনির দশা। আর তাতে কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হন পৌরবাসী। চেয়ারে বসতে না বসতেই মেয়র ও একাধিক কাউন্সিলরদের মধ্যে দ্বন্দ লেগেই থাকে। এক সময় সেই বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এরই অংশ হিসেবে বিশ্বনাথ পৌরসভার ৭ কাউন্সিলর মেয়র মুহিবুর রহমান এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে একটি অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে। সেই অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়া, প্যানেল মেয়র-২ সাবিনা বেগম, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজুক মিয়া রাজ্জাক, ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুর আলী, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম আহমদ, ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসনা বেগম ও ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লাকী বেগম। আর পৌরসভার কাউন্সিলর যথাক্রমে ফজর আলী, মুহিবুর রহমান বাচ্চু ও বারাম উদ্দিন, মেয়রের পক্ষে পক্ষাবলম্বন করেন। এরপর দুপক্ষের মধ্যে হামলা-মামলার ঘঠনাও ঘঠে।
    গত ২৩ এপ্রিল ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগম তার উপর মেয়র মুহিবুর রহমান হামলা করেছেন এই অভিযোগে মেয়রকে প্রধান আসামী ও একাধিক কাউন্সিলরকে আসামী করে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের প্রতিবাদে গত ২৮ এপ্রিল মেয়রের অনুসারীরা তাঁর বাসার সামনে একটি প্রতিবাদ সভার ডাক দেয়। এর প্রায় ১০০ গজ দূরে কাউন্সিলর রাসনা বেগমের উপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামীলীগও পাল্টা প্রতিবাদ সভার ডাক দেয়। এক সময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে পথচারীসহ ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় দুইপক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলাও করেন। কাউন্সিলর রফিক মিয়ার দেওয়া মামলায় প্রায় ১ সপ্তাহ কারাবাস করেন কাউন্সিলর ফজর আলী।

    ৭ কাউন্সিলরের দায়ের করা অনাস্থা ও অভিযোগের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে গত ২৭ জুন ২০২৪ বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র এর পদ থেকে মুহিবুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এরপর বিশ্বনাথে শুরু হয় তোলপাড়। মেয়রের অনুসারীরা এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র এর পদ থেকে মুহিবুর রহমানকে বরখাস্থের ঘটনায় বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামীলীগ ঐদিন বিশ্বনাথ পৌরশহরে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল বের করে আর মেয়র বলয়ের কাউন্সিলর ফজর আলী বিশ্বনাথে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেকে প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে দাবি করে বলেন, গত ২৪ মার্চ বিশ্বনাথ পৌরসভার মাসিক সভায় মেয়র, কাউন্সিলর রফিক মিয়াসহ অধিকাংশ কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়ার বিরুদ্ধে নানা-দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়ায় তাকে অপসারণ করে আমাকে প্যানেল মেয়র-১ নির্বাচিত করা হয়। এতে উপস্থিত সবাই সাক্ষর করেন।
    এবিষয়ে কাউন্সিলর রফিক মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, পৌরসভার প্রথম সভায় আমাকে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করা হয়। আমি দুইবার ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছি। প্যানেল মেয়র বাদ দেওয়ার পৌরসভার কোন আইন আছে বলে আমার জানা নেই।
    এদিকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত দুটি প্রজ্ঞাপনের একটিতে মেয়র এর নাম উল্লেখ থাকলেও অপর প্রজ্ঞাপনে প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে কারো নাম উল্লেখ নেই। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিশ্বনাথ পৌরসভার আসল প্যানেল মেয়র কে ?
    মেয়র পদের ম্যাজিকেল চেয়ারে বসতে এক সময়ের ২ ঘনিষ্ট কাউন্সিলর বন্ধুর মধ্যকার দ্বন্দ যাহাতে সংঘাতের রুপ না নেয় সেই প্রত্যাশা বিশ্বনাথের সচেতন মানুষের।
    অপরদিকে মেয়র এর পদ পুনরুদ্ধারে আইনী পাড়ায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সাময়িক বরখাস্থ হওয়া মেয়র মুহিবুর রহমান। বরখাস্তের প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্বনাথ একটি রাজনৈতিক সচেতন জনপদ। আমার প্রতি প্রভাবশালী মহল ও ক্ষমতাধরদের প্রতিহিংসা নতুন কিছু নয়। জনগণের তীব্র প্রতিরোধে জুলুমবাজ ও ষড়যন্ত্রকারীরা বারবার পরাজিত হয়েছে। ইনশাআল্লাহ এবারও তারা পরাজিত হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যারা জনগণের উপর অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চায়। ইনশাআল্লাহ আমরা আইনী লড়াই করে সত্যের বিজয়ের নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে পৌরসভার মাসিক সভায় কাউন্সিলর রফিক মিয়াকে প্যানেল মেয়র ১ থেকে সরিয়ে কাউন্সিলর ফজর আলীকে প্যানেল মেয়র ১ করা হয়। ওই সভায় কাউন্সিলর রফিক মিয়াও উপস্থিত ছিলেন। সেই থেকে রফিক মিয়া আমার বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র শুরু করে।

    বিশ্বনাথের রাজনীতি সব সময় উত্তপ্ত থাকে বলে দেশবাসির দৃষ্ঠি সব সময় এ জনপদের উপর পড়ে। আর ইতিমধ্যে গত তিন দশকে বিশ্বনাথে ঝরে গেছে অনেক তাজা প্রাণ। শতশত মামলায় আসামি হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আর কেউই চায় না বিশ্বনাথের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হোক। বিশ্বনাথ পৌরসভার এই দ্বন্দকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের বিরোধ কোন দিকে মোড় নেয় তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় এলাকার সাধারণ মানুষ। এমতাবস্থায় আইনী লড়াই শেষে মেয়র মুহিবুর রহমান যদি তার পদ ফিরে পান তাহলে হয়ত স্থানীয় রাজনীতিতে আবারও দারুণ এক চমক দেখাবেন। আর না হয় হয়তো আইনী লড়াই চালাতে গিয়ে মেয়াদ শেষের শেষ ঘন্টার বেদনার সুর শুনা লাগতে পারে তাকে!



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ