বিস্তারিত
  • বিশ্বনাথে পঞ্চগ্রাম দাখিল মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগে স্মারকলিপি


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 05 September, 2024, 7:17 PM || বিশ্বনাথ


    নিজস্ব প্রতিবেদক:: বিশ্বনাথে আমতৈল পঞ্চগ্রাম মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার কর্তৃক সকল শিক্ষক কর্মচারী পদে নিয়োগ জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাৎ ও মাদ্রাসা সুপারের অপসারণ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী।
    স্মারকলিপিতে প্রকাশ: নিম্নোক্ত সাক্ষরকারীগণ বিশ্বনাথ উপজেলার বৃহত্তর আমতৈল (আমতৈল, জমশেরপুর, মাখরগাঁও, ধলিপাড়া) গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। ১৯৯৯ সালে আমাদের গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় আমতৈল পঞ্চগ্রাম মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মাদ্রাসাটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা হিসেবে গ্রামের মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। পরবর্তী কয়েক বছর পর মাদ্রাসাটি দাখিল মাদ্রাসায় উন্নিত হয়।
    ২০১৯ সালে মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। ১৯৯৯ সালে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এলাকার পঞ্চায়েত কমিটি মাওলানা রায়হান উদ্দিনকে ইবতেদায়ী প্রধান হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ প্রদান করেন এবং তাঁর সাথে সহকারী শিক্ষক হিসেবে এলাকার কিছু শিক্ষিত লোক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ও এলাকার পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ২০১৯ সালে মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নিম্নোক্ত শিক্ষকগণ খন্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন মখলিছুর রহমান, মোবাশ্বের আলী, আজিজুর রহমান, রেজাউর রহমান, রাজু মিয়া, আলিম উদ্দিন, কাওসার আহমদ, শরিফ আহমদ, হৃদয়, আক্তার হোসাইন, ইকবাল হোসাইন, জাকারিয়া, আছাব উদ্দিন, আবিদুল হক, গোলাম রব্বানী, আনিসুর রহমান, মস্তাক আহমদ প্রমুখ।
    ২০১৯ সালের মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হওয়ার কিছু দিন পর আমরা দেখতে পাই, মাদ্রাসা সুপার রায়হান উদ্দিন মাদ্রাসার সভাপতি থেকে শুরু করে ডিজির প্রতিনিধিসহ সকল স্বাক্ষর জালিয়াতি, পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জালিয়াতি এবং নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র জালিয়াতি করে প্রতিজনের কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা থেকে পনের লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে অবৈধভাবে ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করেন। অবৈধভাব নিয়োগ প্রাপ্ত ১৬ জনের মধ্যে ২০১৯ সালে এমপিভূক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শুধুমাত্র মুখলেছুর রহমান ছাড়া আর কেউ এই মাদ্রাসায় কোনদিন কর্মরত ছিলেন না। এমনকি সাবেক বা বর্তমান কোন ছাত্র-ছাত্রী অবৈধ নিযোগ প্রাপ্ত এসকল শিক্ষকদেরকে পূর্বে কখনো মাদ্রাসায় দেখেনি এবং চিনেও না। উল্লেখ্য, অবৈধভাবে নিযোগ প্রাপ্তদের মধ্য থেকে এলাকার লোক হিসেবে আলী আসগর জাহিদকে মাঝে মধ্যে মাদ্রাসার অফিসে দেখা যেত। পাশাপাশি ইবতেদায়ী প্রধান রায়হান উদ্দিন নিজের ক্ষমতাবলে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সকল কাগজপত্র জালিয়াতি করে দূর্নীতির মাধ্যমে ইবতেদায়ী প্রধান থেকে নিজেকে সুপার হিসেবে এমপিভুক্ত করে নেন।
    বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতাদের ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষজন দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট প্রায় দেড় কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পরেও এ ব্যাপারে কোন ধরনের প্রতিবাদ করেনি। এলাকার কিছু সচেতন ব্যক্তিবর্গ উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে শুরু করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি পর্যন্ত বেশ কিছু অভিযোগ পত্র প্রদান করলেও অভিযোগের কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি। গত ৫ আগস্ট নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর থেকেই সারাদেশে ছাত্র-জনতা ও সচেতন মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহত্তর আমতৈল গ্রামের ছাত্র-জনতা দুর্নীতিবাজ অবৈধ সুপার রায়হান উদ্দিনের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অবৈধ শিক্ষক-কর্মচারী নিযোগের অভিযোগে আন্দোলন শুরু করে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১লা সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারী নিযোগের যাবতীয় তথ্য অবগত হওযার জন্য আমতৈল পঞ্চায়েতের বৈঠকে হাজির হতে সুপারকে কয়েক দিন পূর্বে জানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সে দিন গ্রামের- পঞ্চায়েতের বৈঠকে উপস্থিত হননি। পঞ্চায়েতের ডাকে না আসায় সুপারের সাথে কথা বলার জন্য দুপুর ১ টার পঞ্চায়েত কমিটি এবং ছাত্র-জনতা মাদ্রাসায় যান। মাদ্রাসায় গিয়ে মাদ্রাসা বন্ধ পাওয়া যায় এবং শুধু মাত্র অফিস সহায়ক মাহতাব উদ্দিনকে সেখানে পাওয়া যায়।
    এছাড়া অন্য কোন শিক্ষক-কর্মচারীকে পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসায় যাওয়ার পর জানাযায়, সুপার গত রাতে সকল জিনিস পত্র নিয়ে পরিবারসহ বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। এ খবর শুনে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ও পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যবৃন্দ মাদ্রাসায় কিছু সময় অবস্থান করে চলে আসেন। পরবর্তীতে গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর পঞ্চায়েতের বৈঠকে সুপারের ঘুষ-দুর্নীতি ও অবৈধ শিক্ষক-কর্মচারী নিযোগের বিষয়টি আলোচনা হয় এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অবৈধ সুপার রায়হান উদ্দিনের এহেন ঘুষ, দূর্নীতি, অপকর্মের কারণে তাকে অপসারণ এবং অবৈধ শিক্ষক-কর্মচারী নিযোগ বাতিল করে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানানো হয়।
    বিশ্বনাথ উপজেলার আমতৈল পঞ্চগ্রাম মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার রায়হান উদ্দিন কর্তৃক সকল শিক্ষক-কর্মচারী নিযোগ কার্যক্রমে অনিয়ম, দূর্নীতি ও জালিয়াতি এবং ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের কারণে তার অপসারণ এবং অবৈধ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাতিল করে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোরদাবী জানান এলাকাবাসী।



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ