বিস্তারিত
  • বিশ্বনাথের মাহতাবপুর মৎস্য আড়ত দখল নিয়ে দুই পক্ষে উত্তেজনা


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 14 October, 2024, 1:54 PM || বিশ্বনাথ


    বিশ্বনাথবিডি২৪:: সিলেটের বিশ্বনাথের মাহতাবপুর মৎস্য আড়তের দখল নিয়ে অন্তর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা বশির উদ্দিন পক্ষ এবং সাবেক মেম্বার হেলাল উদ্দিন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বশির উদ্দিন পক্ষের দাবি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাদেরকে চার চারবার মাহতাবপুর মৎস্য আড়ৎ অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেওয়া হলেও তা মানতে নারাজ হেলাল উদ্দিন ও তার পক্ষ। নানাভাবে হুমকি ধামকি ও ভয়ভিতি দেখিয়ে মাছবাজারের ব্যবসায়ীদের দোকানপাট লুটপাট করে অবৈধভাবে বাজার দখলে নিতে এরই মধ্যে কয়েক দফা দাঙ্গাহাঙ্গামা দোকানঘর লুট করেছেন হেলাল মেম্বার। আইনের তোয়াক্কা না করে বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করতে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত না হয়েও বৈঠকের বিচারক উপজেলা বিএনপির সভাপতি গউছ আলী ও সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন হেলাল মেম্বার।
    অন্যদিকে হেলাল মেম্বার পক্ষের দাবি, অবৈধভাবে মাছ বাজার দখলে রেখেছেন বশির উদ্দিন পক্ষ। বাজারের আদিপত্য বিস্তার নিয়ে এরই মধ্যে তার বাড়িতে হামলা করেছেন বশির উদ্দিন পক্ষ। আর শালিস বিচারের নামে টাকা আত্মসাৎ করায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি গউছ আলী ও সম্পাদক লিলু মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে সিলেটে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তিনি।
    জানাগেছে, ২০২২ইং সনের ৬ সেপ্টেম্বর মাছ বাজার কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সভাপতি আব্দুল মান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক মুল্লা তাদের পদ ছাড়তে নারাজ। তারা টিকে থাকার জন্য তাদের পক্ষের হেলাল উদ্দিন মেম্বারকে নিয়ে দল গঠন করেন। আর হেলাল মেম্বারের নেতৃত্বে বিশ্বনাথ থানা, সিলেট আদালত, এমনকি ঢাকায় গিয়ে হাইকোর্টেও একাধিক মামলা করেন প্রতিপেক্ষর বিরুদ্ধে। তবে, সবকটি মামলার রায় পেয়েছেন বশির উদ্দিন পক্ষে।
    গত ৫ আগষ্ট দেশের পট-পরিবর্তনের পর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মাছ বাজার থেকে হেলাল মেম্বার পক্ষকে সরিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী কমিটির সভাপতি ফখর উদ্দিনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এসময় সেনা সদস্যদের সঙ্গে বিশ^নাথ থানা পুলিশও উপিস্থত ছিলেন। এরপর গত ২৫ আগষ্ট মাছ বাজারে বশির পক্ষের কয়েকটি দোকানে হামলা চালান হেলাল পক্ষ। পরে বশির পক্ষরাও পাল্টা হামলা করেন বলে অভিযোগ উঠে। এনিয়ে সালিশ বৈঠকের ডাক দেওয়া হলে উভয় পক্ষে ৫লাখ টাকা করে জমা করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকদের কাছে।
    পরবর্তিতে কয়েকদফা বৈঠকের তারিখ পরির্বতন করিয়েও গত ২১ সেপ্টেম্বরের সালিশ বৈঠকে উপস্তিত হননি হেলাল পক্ষ। এরপর বৈঠকের বিচারকরা হেলাল মেম্বার পক্ষের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করেন বিচারকরা। তবে আমানতের ৫লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন হেলাল উদ্দিন। এরপর তিনি গত ৮ অক্টোবর –সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিষ্ট্রেট ৩নং আমলী আদালতে বিএনপির সভাপতি গউছ আলী ও সম্পাদক লিলু মিয়াকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন, (সিআর মামলা নং-৩০৮)।
    এর আগে একেক করে ৪টি অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করে দেন সিলেটের জেলা সমবায় কর্মকর্তা চন্দন দত্ত। এরপর একাধিকবার অন্তর্বর্তী কমিটির নেতারা বাজারের হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট আবেদন করেন। সর্বশেষ গত ১জুলাই বর্তমান অন্তর্বর্তী কমিটির সভাপতি ফখর উদ্দিন হেলাল মেম্বার পক্ষের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির প্রাক্তণ সভাপতি আব্দুল মান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক মুল্লা বাজারের ৭২লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন উল্লেখ করে টাকা উদ্ধারের জন্য ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন।
    তারও আগে একই বিষয় উল্লেখ করে সাবেক অন্তবর্তী কমিটির সভাপতি জমির উদ্দিন গত ২১ এপ্রিল সিলেটের জেলা সমবায় অফিসারের নিকটও একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এমনকি ১৯জুন একই বিষয় উল্লেখ করে জেলা সমবায় কর্মকর্তার নিকট সমিতির পক্ষে লিখিত অভিযোগ দেন ইমাম উদ্দিন ও বশির উদ্দিন।
    বশির উদ্দিন বলেন, হেলাল উদ্দিন জোরপূর্বক বাজার দখলে নিতে দাঙ্গাহাঙ্গামা করে লুটপাট করেছেন। তার পক্ষের হাসনাথ বাদী হয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা ১২৮৮০ নং মামলা এবং সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা ৮৫৩ নং মামলার রায় তাদের পক্ষে এসেছে। এছাড়া জেলা সমবায় কার্যালয়ে ডিসপুট মামলা নং ১ ও বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ে আপিল মামলা নং ৬, জেলা জজ আদালতে দায়ের করা ৫১নং মামলার রায়ও তাদের পক্ষে এসেছে। সর্বশেষ সালিশের রায়ও তাদের পক্ষে এসেছে।
    বশির উদ্দিন আরও জানান, তাদের প্রতিপক্ষ হেলাল উদ্দিন পক্ষের বিরুদ্ধে বর্তমানে থানার এসআই অনিক বডুয়ার দায়ের করা একটি, বর্তমান অন্তর্বর্তী কমিটির সভাপতি ফখর উদ্দিনের একটি, দুদকে একটি এবং সিলেট সিআইডিতে আরও একটি মামলা চলমান রয়েছে।
    হেলাল উদ্দিন বলেন, তিনি মাছ বাজারে কোন দাঙ্গাহাঙ্গামা করেননি, লুটপাটও করেননি। বরং বশির উদ্দিন ও অন্তর্ববর্তী কমিটির নেতারা তার বসত ঘর ও মাছ বাজারের দোকানে হামলা ও ভাংচুর করেছেন। আর মামলার রায় বশির পক্ষে নয় মামলাগুলির রায় তাদের পক্ষে গিয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ শালিস বৈঠকের রায় সম্পর্কে তিনি বলেন, রোগী নিয়ে ঢাকায় থাকার পরও শালিসকারীরা বেআইনীভাবে তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন, যেকারণে তিনি বিএনপি নেতাদের আসামি করে আদালতে মামলা করেছেন। এছাড়া প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
    বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সভাপতি গউছ আলী ও সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া বলেন, সালিশ বৈঠকের একাধিক তারিখ পরিবর্তনের পরও হেলাল উদ্দিন পক্ষ উপস্থিত না হওয়ায় এবং আইনীভাবে সকল কাগজপত্র বশির উদ্দিন পক্ষে থাকায় আমরা শালিসকারীরা হেলাল পক্ষের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছি।
    বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুবেল মিয়া বলেন, মাহতাবপুর মাছবাজার নিয়ে উভয় পক্ষে মামলা চলমান রয়েছে। এনিয়ে থানার এসআই অনিক বড়–য়াও একটি মামলা করেছেন। বিষয়টি আমরা দেখতেছি এবং পুলিশি টহল অব্যাহত আছে।
    উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুনন্দা রায় বলেন, মাহবাতপুর মৎস্য আড়তের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
    সিলেট জেলা সমবায় অফিসার চন্দন দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, মেয়াদ শেষ হওযার পর প্রথমে তিনজন সরকারি অফিসার, তারপর একজন অফিসারের সঙ্গে আরও দুইজন ব্যবসায়ী, তারপর ব্যবসায়ী জমির উদ্দিনকে সভাপতি করে ৩য় কমিটি এবং সর্বশেষ ফখর উদ্দিনকে সভাপতি করে ৪র্থ অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করা হয়েছে।



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ